==========================================================================================================

Monday, November 23, 2015

Travel to Rangamati - রাঙ্গামাটি ভ্রমণঃ

রাঙ্গামাটি পরিচিতিঃ

পাহাড়ী কন্যা রাঙ্গামাটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপার লীলাভূমি। রূপবৈচিত্র-হ্রদের জল-পাহাড় আর অরণ্যের অপার সৌন্দর্যের কোল ঘেঁষে রয়েছে প্রকৃতির রূপসী কন্যা রাঙামাটি। চট্টগ্রাম বিভাগের পার্তব্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলার মধ্যে অন্যতম এই রাঙামাটি জেলা। আঁকা-বাঁকা পথ আর উঁচু-নিচু পাহাড় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাঙামাটি। এখানকার লেক, ঝরনা, বিস্তির্ন নীল আকাশ, পাহাড় সর্বপরি আদিবাসি মানুষের সাধারন সহজ-সরল জীবন আপনাকে বিমহিত করবে। এখানে যেদিকে তাকাবেন নজরে পড়বে কেবল পাহাড় আর কাপ্তাই লেকের পানি। বিশাল কাপ্তাই লেকের পুরোটাই যেন অপার মমতায় দুহাত দিয়ে ধরে রেখেছে পাহাড়গুলি। আকাশের মেঘ আর তার নীলাভ আভা খেলা করে লেকের জলে, দূরে পাহাড়ের আড়ালে হারিয়ে যায়, আবার যেন উঁকি দিয়ে দেখে নেয়, কেমন আছে লেক।
Travel to Rangamati









কিভাবে যাবেন:

ঢাকা টু রাঙ্গামাটি অনেক গুলো পরিবহন বাস আছে যেমন: সোহাগ, সৌদিয়া, শ্যামলী, হানিফ, ঈগল ইত্যাদি। আপনি কল্যাণপুর, কলাবাগান বা সায়দাবাদ থেকে রওনা হতে পারেন। ভাড়া ননএসি ৬০০-৬৫০ টাকা, এসি ৮০০-১০০০ টাকা। তবে মনে রাখবেন সময় ও ভ্রমনের দিন গুলিকে সঠিক ব্যবহার করা উচিৎ আর তা রাতে রওনা হওয়াই শ্রেয়। রাতে রওনা হলে (১০-১১ টা) আপনি খুব ভোরে (৬-৭ টা) পৌছে যাবেন রাঙ্গামাটি। এতে আপনার মূল্যবান একটি দিন বেঁচে যাবে। চট্টগ্রামের বিআরটিসি, অক্সিজেন মোড় ও বিভিন্ন বাসস্টেশন থেকেও রাঙামাটির গাড়ি পাওয়া যায়। এছাড়া প্রাইভেট গাড়ি নিয়েও ঘুরে
আসতে পারেন রাঙামাটি। সেক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন হবে অভিজ্ঞ চালক।

কোথায় থাকবেনঃ

রাঙামাটিতে রাত যাপনের জন্য সরকারি-বেসরকারি অনেকগুলো হোটেল ও গেস্ট হাউজ রয়েছে; রয়েছে বোডিংও। বোডিংয়ের খরচ কম হলেও খুব একটা ভালো ব্যবস্থা নেই।
পুরাতন বাস স্ট্যন্ড ও রিজার্ভ বাজার এলাকায় বেশকিছু ভালো হোটেল আছে
কয়েকটি হোটেলের বর্ণনা:
(১) পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স: ১২টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষসহ বেশ কয়েকটি সিঙ্গেল ও ডাবল রুম রয়েছে এই হোটেলে।
(২) হোটেল সুফিয়া: এতে রয়েছে ২৭টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম। এছাড়া ছোট-বড় সব মিলিয়ে সাধারণ কক্ষ রয়েছে আরও ৩৫টি।
(৩) হোটেল নিডস হিল ভিউ: ১৫টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আর ১০টি সাধারণ রুম রয়েছে এতে।
(৩) হোটেল গ্রীন ক্যাসেল: এই হোটেলে রয়েছে ৭টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম। এছাড়া কিছু সাধারণ সিঙ্গেল ও ডাবল রুমওও রয়েছে।
এছাড়াও রয়েছে হোটেল জজ, হোটেল আল মোবা, হোটেল মাউন্টেন ভিউ, হোটেল ডিগনিটি, হোটেল সাফিয়া, হোটেল ড্রিমল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি মধ্যম মানের হোটেল।
এর সবকটি হোটেল-ই রাঙামাটি জেলা শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত। তাই এখানে অবস্থান করেই খুব সহজেই ঘুরে বেড়াতে পারেন জেলার সবকটি দর্শনীয় স্থানে।

কি দেখবেনঃ

রাঙামাটিতে রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে কাপ্তাই লেক, পর্যটন মোটেল, ডিসি বাংলো, দেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত ব্রিজ, পেদা টিংটিং, সুবলং ঝর্ণা, রাজবাড়ি, রাজবন বিহার, উপজাতীয় জাদুঘর, কাপ্তাই হাইড্রো ইলেক্ট্রিক প্রজেক্ট, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান উল্লেখযোগ্য।
Travel to Rangamati

কাপ্তাই - হ্রদ শহরঃ

গুরুত্বের বিবেচনা করলে কাপ্তাই আলাদা ভাবে বলার দাবি রাখে।
এটি রাঙামাটি  শহরের কাছেই বলা চলে। সড়ক পথে দেড় ঘন্টা আর জল পথে আড়াই ঘন্টার পথ।কাপ্তাই ছোট্ট একটা উপজেলা শহর। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলানিকেতন কাপ্তাই হ্রদ। দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ্ এই কৃত্রিম হ্রদ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। উঁচু-নিচু পাহাড়-পর্বত, পাহাড়ি ঝরনাধারা, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা, অথৈ পানি আর সবুজের সমারোহ, গাঢ়-সবুজ বন, গাছ-গাছালি ফুল-ফল আর উপজাতিদের জীবনধারা কাপ্তাই লেকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
লেকের পানিতে অজস্র মাছ আর জীববৈচিত্র্যের সমাহার। পাহাড়ের গায়ে ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ আর সুবজের সম্ভার। সব মিলিয়ে কাপ্তাই লেক পর্যটন, প্রাণিসম্পদ ও জীববৈচিত্র্যের এক বিশাল ভাণ্ডার।
রাঙামাটিসহ বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থিত মিঠাপানির এই হ্রদটির আয়তন প্রায় ৬৮ হাজার ৮০০ হেক্টর। বর্গমাইল হিসাবে এর আয়তন ২৫৬ বর্গমাইল, যা দেশের পুকুরগুলোর মোট আয়তনের ৩২ শতাংশ ও অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের প্রায় ১৯ শতাংশ। জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে তৈরি হলেও মত্স্য উৎপাদন, দেশি-বিদেশি মুদ্রা উপার্জন, জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ী এবং স্থানীয়দের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও জীবন-জীবিকা থেকে শুরু করে দেশের সামগ্রিক মৎস্যক্ষেত্রে কাপ্তাই লেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে।

Rangamati










কাপ্তাই হ্রদ মূলত কর্ণফুলী হ্রদের আঞ্চলিক নাম। এ হ্রদ সৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্কিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধটি পার্বত্য চট্টগ্রামের কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত। বাঁধের অবস্থানস্থল কাপ্তাইয়ের নাম অনুসারে স্থানীয় বাসিন্দারা এটিকে কাপ্তাই হ্রদ হিসেবে বলতে থাকে, যা কোনো কোনো নথিপত্রে কর্ণফুলী হ্রদ হিসেবেও পরিচিতি লাভ করে। কাপ্তাই বাঁধের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর ১৯৬১ সালের মে মাসে এর স্পিলওয়ে বন্ধ করা হয়। বাঁধ নির্মাণের আগে বর্তমান হ্রদটি ছিল ছোট-বড় পাহাড়, টিলা ও উপত্যকা পরিবেষ্টিত এক বিশেষ বৈশিষ্ট্যময় স্থলভূমি। যার উপত্যকা ও পাহাড়ের ঢালুপৃষ্ঠ চাষাবাদের কাজে ব্যবহার হতো। আসামের লুসাই পাহাড় থেকে সৃষ্ট কর্ণফুলী নদী বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে থেকে আসা কাসালং, মাইনি, রিংকং এবং চেঙ্গী নদীর মিলিত প্রবাহ স্থলভাগের ওপর দিয়ে কর্ণফুলী নামে সরাসরি বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত হতো। কাপ্তাইয়ে বাঁধ দেয়ার ফলে এসব নদী ও আশপাশের নিচু এলাকাসহ বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে এ হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে।
কাপ্তাই বাঁধটি চট্টগ্রাম শহর থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে ৫৬ দশমিক ৩১ কিলোমিটার এবং বঙ্গোপসাগরের তীর থেকে ৬৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। হ্রদের জলায়তন প্রায় ৫৮ হাজার ৩০০ হেক্টর, যা বর্ষা মৌসুমে সর্বোচ্চ ৬৮ হাজার ৮০০ হেক্টরে গিয়ে দাঁড়ায়। এর গড় গভীরতা হয় ৯ মিটার এবং সর্বোচ্চ গভীরতা ৩৬ মিটার। মৌসুমভেদে গভীরতার তারতম্য হয় ৮ দশমিক ১৪ মিটার। আকৃতির দিক থেকে কাপ্তাই হ্রদ অনেকটা ইংরেজি এইচ (ঐ) অক্ষরের মতো। মাইনি ও কাসালং খালের সম্মিলিত প্রবাহের সঙ্গে নিম্নাঞ্চলে মূল কর্ণফুলী নদীর প্রবাহ মিলে হ্রদটির ডানদিকের সুদীর্ঘ ও বৃহত্তর অংশটি সৃষ্টি হয়েছে। বাঁদিকের রাঙামাটি-কাপ্তাই অংশটি সৃষ্টি হয়েছে উত্তরদিক থেকে আসা চেঙ্গী নদী থেকে প্রবাহিত ধারার সঙ্গে নিম্নাঞ্চলে দক্ষিণ-পূর্বদিক থেকে আসা রাইংখিয়ং বা রিংকং নদীর প্রবাহের মিলনের ফলে। হ্রদের এই বিশাল জলাধার দুটির মাঝখানে সরু ও সুগভীর শুভলং চ্যানেল (মূলত কর্ণফুলী নদীর প্রবাহ) দ্বারা যুক্ত হয়েছে।
Travel to Rangamati












হ্রদের তটাঞ্চল প্রায়ই পাথরময় এবং তলদেশ খুবই অসমতল। একমাত্র মূল নদীবক্ষগুলো ছাড়া প্রায় সর্বত্রই যুক্ত টিলা, পাথরের চাঁই (বিশালাকারের পাথরের টুকরো) এবং পরিত্যক্ত বড় বড় গাছের গুঁড়ি রয়েছে। ফলে সহজে এবং সব জায়গায় মাছ ধরা যায় না। পাহাড়ের পাদদেশে সমতল এলাকার মাটি পাহাড়ের উপরের পৃষ্ঠের মাটি অপেক্ষা ভারী বুনটের ও প্রায়ই মিহি কাদাময়। অন্যদিকে পাহাড় ও টিলাপৃষ্ঠের মাটি অপেক্ষাকৃত হালকা বুনটের, লাল ও বেলে বা বেলেজাতীয়। হ্রদ এলাকার অধিকাংশ উঁচু জমি জুম চাষ ও বনায়নে এবং তুলনামূলক নিচু ও জলে ভাসা জমি কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয়।

এই হ্রদ সৃষ্টির উদ্দেশ্য মূলত জলবিদ্যুৎ উৎপাদন। এছাড়া বৃহত্তর চট্টগ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ, কৃষি ও সেচব্যবস্থার সুযোগ সৃষ্টি, বনজ সম্পদ আহরণ, দুর্গম এলাকায় নৌ চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি, মৎস্যচাষ ও পর্যটন শিল্পের বিকাশও ছিল এর উদ্দেশ্য। অবস্থানগত কারণে পার্বত্য জেলাগুলোর বন্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এ হ্রদ শুরু থেকেই বিশেষ গুরুত্ব বহন করে আসছে। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি ও মনোলোভা আকর্ষণীয় পর্যটন স্থানগুলো উপভোগ্য। এখানে আছে পর্যটনের ঝুলন্ত সেতু, কৃষি খামার, শুভলং ঝরনা ও নৈসর্গিক সৌন্দর্য, পেদা টিংটিং রেস্টুরেন্ট, সাংফাং রেস্টুরেন্ট, চাকমা রাজার রাজবাড়ি, রাজ বনবিহার, উপজাতীয় জাদুঘর, জেলা প্রশাসকের বাংলো, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদুর রউফের সমাধি সৌধ এবং উপজাতি পাড়া ও জীবনযাত্রার দৃশ্য।

Travel to Rangamati













রাঙামাটির উপজাতিদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে বিশেষভাবে জানতে চাইলে স্থানীয় উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে গিয়ে জানা যায়। প্রতি বছর এপ্রিল মাসে আদিবাসীরা ‘বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক উৎসব বা চৈত্রসংক্রান্তি উৎসব’ পালন করে। প্রতি বছর এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের দিকে এ উৎসব পালিত হয়ে থাকে। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতিদের প্রধান সামাজিক উৎসব। এছাড়া পাহাড়ে বানর, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, সেগুন কাঠের বাগান, পাহাড়ি ও বন্য ফুলফলের সমাহার রয়েছে রাঙামাটিতে।

ঝুলন্ত সেতুঃ

৭০ দশকের শেষদিকে সরকার রাঙামাটি জেলাকে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে এবং পর্যটন করপোরেশন পর্যটকদের সুবিধার্থে আকর্ষণীয় স্পট ও পর্যটন কমপ্লেক্স স্থাপন করে। রাঙামাটির অন্যতম আকর্ষণ এই পর্যটন কমপ্লেক্স। এখানকার ঝুলন্ত সেতু ও এর আশপাশের নৈসর্গিক দৃশ্যাবলি দেখার মতো। দুটি পাহাড়ের মধ্যে সংযোগ ঘটিয়ে কাপ্তাই হ্রদের ওপর ঝুলে আছে এ সেতু। বছরের দু-এক মাস অবশ্য এ সেতু হ্রদের পানিতে ডুবে থাকে। শীত মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে গেলে সেতুর ওপর পানি থাকে না। এই ঝুলন্ত সেতুটা দেশি বিদেশী পর্যটকদের কাছে একটা মূল আকর্ষণ। সেতুতে দাঁড়িয়ে লেকের বিশাল জলরাশির অনেকটা দেখা যায়। রাঙামাটি শহরের অদূরে ঝুলন্ত সেতুর পূর্বদিকে বিশাল জলরাশিসহ ছোট-বড় বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে রয়েছে সবুজ পাহাড়। মজার ব্যাপার হলো, রাঙামাটি শহরে কোনো রিকশা নেই। তবে ইদানীং প্রচুর অটোরিকশা (সিএনজি) পাওয়া যায়। ভ্রমণপিয়াসী মানুষের জন্য রয়েছে টুরিস্ট নৌকা। এসব নৌকায় আপনার পছন্দমতো যে কোনো স্পটে ভ্রমণ করতে পারেন।
Travel to Rangamati












শুভলং ঝরনাঃ

রাঙামাটি তথা কাপ্তাই লেকের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ শুভলং ঝরনা ও এর আশপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য। বর্ষায় ঝরনাটি পরিপূর্ণ রূপ মেলে ধরে। চারদিকে বিশাল বিশাল সবুজ পাহাড়ঘেরা এই ঝরনায় পানি পড়ার দৃশ্য সত্যিই অপরূপ। তবে শুকনো মৌসুমে ঝরনায় পানি কম থাকে। শুভলংয়ের আশপাশের পাহাড়গুলো খুবই খাড়া, উঁচু ও নয়নাভিরাম। ইঞ্জিন নৌকায় কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ জলরাশির বুক চিরে শুভলংয়ের দিকে যত এগোবেন, ততই ভালো লাগায় ভরে উঠবে মন।
Travel to Rangamati













আদিবাসী গ্রামঃ

রাঙামাটি থেকে শুভলংয়ের উদ্দেশে এগোতে থাকলে দেখতে পাবেন কিছু আদিবাসী গ্রাম। সেখানকার নির্মল পরিবেশে উপজাতিদের আবাসস্থল, জীবনযাত্রা দেখা যায়। পাহাড়ি বিভিন্ন ফলমূল ও পোশাক কেনা যাবে এসব গ্রাম থেকে। এসব গ্রামের পাহাড়ে আছে জুমক্ষেত (পাহাড়ের চূড়ায় চাষাবাদ)। জানা যায়, একসময় এখানে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের জন্য পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল; কিন্তু বাঁধ নির্মাণ করা হলে ভারতের কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়বে বলে সেই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছিল। এরপর দেখতে পাবেন পাহাড়ের কোল থেকে নেমে আসা কয়েকটি ঝরনা। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঝরনাটি দেখলে সত্যিই ভালো লাগবে। ঝরনাগুলোতে দেখা যায় পাহাড়ের ওপর থেকে নেমে আসা ঝরনার পানির পাথুরে মাটিতে আছড়ে পড়ার অপূর্ব দৃশ্য। এখানে ইচ্ছে করলে গোসল করা যায়। ঝরনা দেখা শেষে শুভলং বাজার ঘুরে আসতে পারেন। সেখানে সেনাবাহিনীর একটি মনোরম ক্যান্টিনও রয়েছে। বরকল, লংগদু, মাইনিমুখ ও কাসালংসহ আরও অনেক এলাকার নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখা যায় রাঙামাটিতে।

পেদা টিংটিং :

শুভলং যেতেই রাঙামাটি শহরের অদূরে একটি সবুজ দ্বীপ দেখা যায়। সেখানে রয়েছে একটি রেস্টুরেন্ট, চাকমা ভাষায় এর নাম ‘পেদা টিংটিং’। এর অর্থ হলো পেট ভরে খাওয়া। এখানে পাওয়া যায় কাঁচা বাঁশের ভেতর রান্না করা বিশেষ খাবার সুমত কোরায়রা। মুরগি ও মাছ দিয়ে তৈরি হয় এ খাবার। এছাড়া লেকের টাটকা মাছের তৈরি বিভিন্ন ভর্তা ও মাছ পাওয়া যায় এখানে। পেদা টিংটিং থেকে একটু দূরে নতুন গড়ে উঠেছে আরেকটি রেস্টুরেন্ট—সাংপাং। এখানকার হুর হেবাং (বাঁশের ভেতর রান্না করা মুরগির তরকারি) ও বদা হেবাং (কলাপাতায় রান্না করা ডিম তরকারি) ইত্যাদি খাবার বেশ আকর্ষণীয়।
Travel to Rangamati














বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদুর রউফের স্মৃতিসৌধঃ

নানিয়ারচরের বুড়িঘাট এলাকায় রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদুর রউফের স্মৃতিসৌধ, সাংফাং রেস্টুরেন্ট, টুকটুক ইকো ভিলেজ ও কৃষি খামার। এসব পর্যটন স্পট দেখতে হলে আপনাকে অবশ্যই ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করতে হবে। ল্যান্স নায়েক মুন্সি আবদুর রউফ মুক্তিযুদ্ধের সময় নানিয়ারচরের বুড়িঘাটে শহীদ হন। স্থানীয় এক উপজাতি তাকে ওই স্থানে কবর দিয়েছিলেন। রাঙামাটির বিডিআর ওই স্থানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছে।

রাজবন বিহার:

পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় তীর্থস্থান রাঙামাটির ঐতিহ্যবাহী রাজবন বিহার। চাকমারা অবশ্য বিহার বা মন্দিরকে কিয়াং বলে থাকে। এটি বাংলাদেশের একটি প্রধান বৌদ্ধবিহার। ৩৩ দশমিক ৫ একর এলাকায় ৪টি মন্দির, ভিক্ষুদের ভাবনা কেন্দ্র, বেইনঘর, তাবতিংশ স্বর্গ, বিশ্রামাগার ও হাসপাতাল রয়েছে এতে।

হর্টিকালচার নার্সারিঃ

এছাড়া রাঙামাটি শহরের অদূরে বালুখালীতে হর্টিকালচার নার্সারির বিশাল এলাকাজুড়ে যে উদ্যান রয়েছে, তার সৌন্দর্যও পর্যটকদের আকর্ষণ করে। প্রায় সবসময় এ উদ্যানে পিকনিক হচ্ছে। হর্টিকালচার নার্সারিটি পরিণত হয়েছে আরেক পর্যটন কেন্দ্রে। সারি সারি ফল ও ফুলগাছের পাশাপাশি রয়েছে পাখির কিচিরমিচির শব্দ। সব মিলিয়ে এ উদ্যান পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা বোট ভাড়া রাঙামাটি শহরের কয়েকটি স্থানে পাওয়া যায়। উপজাতিদের হাতে তৈরি নানা ধরনের কাপড় ও বিভিন্ন জিনিসপত্র সংগ্রহ করা যায় রাঙামাটি থেকে। তবলছড়ি, বনরূপা ও রাজবাড়ি এলাকায় এসব পণ্যের বেশ কয়েকটি দোকান ও শোরুম রয়েছে। এসব শোরুম থেকে কম দামে বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনতে পারেন। এছাড়া উপজাতি পাড়ায় গেলে সেখান থেকেও সংগ্রহ করতে পারেন বিভিন্ন সামগ্রী।
Travel to Rangamati










রাঙামাটি-কাপ্তাই সড়কঃ

নতুন চালু হওয়া রাঙামাটি-কাপ্তাই সড়ক পর্যটকদের বেশ আকর্ষণ করে। একদিকে সুবিশাল পাহাড়, উঁচু-নিচু পাহাড়ি সড়ক; অন্যদিকে কাপ্তাই হ্রদের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য আঁকাবাঁকা এই সড়কটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই সড়ক ধরে যেতে পারেন কাপ্তাই। কাপ্তাই না গেলে রাঙামাটি দেখা অপূর্ণ থেকে যায়। এখানে কাপ্তাই জলবিদ্যুত্ কেন্দ্র, কর্ণফুলী পেপার মিল, কর্ণফুলী নদীর অপূর্ব দৃশ্য, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান রয়েছে। তবে কাপ্তাই জলবিদ্যুত্ কেন্দ্র, কর্ণফুলী পেপার মিল দেখার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়।
Travel to Rangamati









অপরূপ দৃশ্যে মন রাঙ্গাতে ঘুরে আসতে পারেন রাঙামাটি থেকে। আপনার সময়টা হয়ে উঠবে আনন্দময়। একবার ঘুরে আসলেই যাত্রাপথ, কাপ্তাই, রাঙামাটি, রাজবন বিহার, জাফলং ঝরনা, কালিট্যাং-এর ছবি আঁকা হয়ে যাবে আপনার মানসপটে। বার বার স্মৃতি হয়ে খেলা করবে হৃদয় মাঝে। রাঙামাটি ভ্রমণের দারুণ একটি ভিডিও দেখুন...


তাহলে সুযোগ পেলেই ঘুরে আসুন পাহাড়ী কন্যা রাঙামাটি থেকে। আর ভ্রমণ শেষে আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে ভুলবেন না। ভালো লাগলে এ পোস্টটি সবার সাথে শেয়ার করুন। আজ এ পযর্ন্ত, ভাল থাকবেন। আরো জানতে এখানে ক্লিক করুন...

আরো পড়ুনঃ Travel to Sundorbon-সুন্দরবন ভ্রমণ
আরো পড়ুনঃ Travel to Cox's Bazar-কক্সবাজার ভ্রমণ

No comments:

Post a Comment